সদ্য জাতীয়করণকৃত পিরোজপুরের সরকারি কাউখালী মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নানা অনিয়ম-অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যদিয়ে তার কর্তব্য-কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলেন অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষক এসব অভিযোগ উত্থাপন করে শিক্ষা মন্ত্রলালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, পিরোজপুর জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
মহাবিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ নজরুল ইসলাম উক্ত প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ এডহক গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে যে দায়িত্ব পেয়েছেন তাকে সরকারি ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়ম লংঘন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাকে এ পদে দায়িত্ব দেয়ার সময় ৯ জন শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতা লংঘন করা হয়েছে। তিনি এ পদে আসার পর থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা একাডেমিক কাউন্সিলের কোন সভা ছাড়াই করেছেন। এইচএসসি টেস্ট ও একাদশ অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় কোন কোন ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করার ক্ষেত্রে সরকারি কাউখালী মহাবিদ্যালয় ও কাউখালী মহাবিদ্যালয় নামে দুইটি পৃথক রশিদ ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত টাকা তিনি ইচ্ছামত ব্যয় করেছেন। শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এইচএসসি’র টেস্ট পরীক্ষা-২০১৮’র ফল আমূল পরিবর্তন করে বোর্ডের নির্দেশনা না মেনে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে সকল ছাত্র-ছাত্রীর ফরম পূরণ করা হয়েছে। দায়িত্ব ভাতার নামে ৫ হাজার টাকা করে কলেজ তহবিল থেকে গ্রহণ করে অবৈধ কাজ করেছেন। সরকারি নিয়মে গেজেট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া প্রাপ্য পরিশোধের অনুমোদন না থাকলেও তা না দিয়ে নিজের ইচ্ছামত অর্থ ব্যয় করছেন এবং বিশেষ বিশেষ শিক্ষককে ভাতা প্রদান করছেন।
অন্যদিকে, গত ২০০২ সালে শেখ নজরুল ইসলাম (বর্তমান দায়িত্বরত অধ্যক্ষ) দর্শন বিভাগে অতিরিক্ত প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ৩১/১২/২০০৩ সার থেকে ৩১/০৩/২০০৪ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে সরকারী বিলভাতা গ্রহণ করেছেন। যা পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক তদন্ত প্রতিবেদনে রিপোর্ট দেয়া হয় এবং উত্তোলন করা অতিরিক্ত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে অধ্যবদি তিনি সরকারী উক্ত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে, কলেজ অধ্যক্ষের নানা দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভুল ব্যাখা দিয়ে নিজের ইচ্ছেমত কার্যক্রম পরিচালনা প্রতিবাদে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারী কলেজের শিক্ষক পরিষদ থেকে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম শহীদ সরওয়ার, সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুদেব হালদার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুজ্জামান এবং ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলাম নামে ৪ জন শিক্ষক পদত্যাগও করেছেন।
কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে শেখ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যা সরকারী বিধিবহির্ভূত। এছাড়া নজরুল ইসলামের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। শিক্ষক এমপিওভুক্তির জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ীই আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়মের কোন কাজ আমি করিনি। কলেজের নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে চলছি। তিনি জানান, কলেজের ৪ জন শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এসব অভিযোগ উন্থাপন করছে।